যদি আমি বিশ্বের শাসক হতাম /স্লাভোয় জিঁজেঁক

মার্টিন ক্রুজ স্মিথ এর থ্রিলার Havana Bay ছবিতে একজন আমেরিকান পরিদর্শক ফিদেল কাস্ত্রোর বিরুদ্ধে সংগঠিত চক্রান্তে ধরা পড়ে; কিন্তু পরে আবিষ্কৃত হয় চক্রান্তটি কাস্ত্রো নিজেরই কারসাজি। তাঁর শাসনের ব্যাপারে রাষ্ট্রের উপরের কর্তা-কর্মচারীদের ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ সম্পর্কে কাস্ত্রো সচেতন ছিলেন, তাই কয়েক বছর পর পর তাঁকে উৎখাত করার চক্রান্ত সংগঠিত করতে গুপ্তচরদের আদেশ দিতেন যার উদ্দেশ্য ছিল এমন নাটক সাজিয়ে বিশ্বাসঘাতকদের নির্মূল করা। চক্রান্তটি কার্যকর করার পূর্ব মুহূর্তে দোষীদের গ্রেফতার করে হত্যা করা হতো। আমি যদি বিশ্বের শাসক হতাম তাহলে নিজের রাজত্ব নিরঙ্কুশ করার জন্য আমিও প্রথমে তাই করতাম – GK Chesterton এর বই The Man Who Was Thursday তে সৃষ্টিকর্তা নিজেও তাই করেছেন।

আমার পরবর্তী বিবেচনার বিষয় হবে কিভাবে নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান নীচু করে রাখা যায়। এবং কেন? এখানে আমি অনুসরণ করতাম ইসমাইল কাদারের উপন্যাস The Pyramid কে যেখানে মিশরীয় ফেরাউন চিওপস ঘোষণা দেন যে তিনি তার পূর্বসুরীদের মত পিরামিড নির্মাণ করবেন না। এই প্রস্তাবে বিচলিত হয়ে তাঁর উপদেষ্টারা তাঁকে বোঝাতে চেষ্টা করে যে জনগনের উপর কর্তৃত্ব বজায় রাখতে হলে পিরামিড নির্মান জরুরী; কারণ জনগনকে দরিদ্র ও বিভ্রান্ত করে সেই সুবাদে আজ্ঞাবহ করে রাখতে হলে এর বিকল্প নাই। চিওপস ব্যাপারটির সত্যতা বুঝতে পারেন, এবং তাঁর উপদেষ্টারা নাগরিকদের সমৃদ্ধি খর্ব করার বিভিন্ন বিকল্প পরীক্ষা করতে শুরু করে; উদাহরণস্বরূপ, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া, বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় ডেকে আনা (যা নীল নদের পানির নিয়মিত প্রবাহকে ব্যহত করবে এবং কৃষিকাজের ক্ষতি করবে)। কিন্তু এই বিকল্পগুলো খুবই বিপজ্জনক বিচারে বাতিল করা হয় (কারন, যুদ্ধে মিশর পরাজিত হতে পারে, বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় অনিয়ন্ত্রিত ক্ষতির কারন হতে পারে)। তাই তারা এমন বৃহৎ একটি পিরামিড গড়ে তোলার ধারণায় ফিরে যায় যা নির্মাণে দেশের ব্যাপক সম্পদ আহরণ করতে হবে এবং কেড়ে নিবে জনগণের শক্তি ও প্রাণরস, নিশ্চিত করবে জনশক্তির সর্বদা যোগান। এমন প্রকল্পই দুই দশক ধরে দেশে একটি জরুরী অবস্থা বজায় রাখবে, আর গোপন পুলিশ খুঁজে ফিরবে কারা অন্তর্ঘাতী কর্মকান্ড করতে চায়, এবং স্তালিনীয় কায়দায় গ্রেপ্তার, স্বীকারোক্তি ও মৃত্যুদন্ড কার্যকরের ব্যবস্থা করবে। আমিও অনুরূপ উপযুক্ত একটি মিশন খুঁজে পেতে চেষ্টা করব যেমন মঙ্গল ও অন্যান্য গ্রহে মানব অভিযান জন্য ব্যাপক অর্থ বিনিয়োগের মত কার্যক্রম।

এই অসংযত জনপ্রকল্পের অর্থ যোগানের জন্য আমি ধূমপানের জনপ্রসারে আইন পাস করব। ভারী ধূমপায়ীরা কম বয়সেই মারা যাবে – কল্পনা করুন চাকুরীতে অবসর ও স্বাস্থ্য খাতে রাষ্ট্রের খরচ এর ফলে কতখানি কমে যাবে। পাসকৃত আইনের আওতায়, সোভিয়েত কায়দায়, যারা প্রতিদিন অন্তত দুই প্যাকেট সিগারেট ধূমপান করবে তারা হ্রাসকৃত হারে কর দিবে, এবং আর্থিক সংহতি ও একত্রীকরণে সহায়তার জন্য একাজে একজন ব্যক্তিকে জনবীর হিসাবে বিশেষ পদক দেয়া হবে।

উপরন্তু, জননৈতিকতা বজায় রাখা এবং যৌন ভ্রষ্টাচার কমাতে, আমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে বাধ্যতামূলক যৌন শিক্ষা যুক্ত করব। এই পাঠে মন্টি পাইথনের Meaning of Life ছবির বিখ্যাত একটি দৃশ্যের রূপরেখা পদ্ধতি হিসাবে গ্রহণ করা হবে যেখানে একজন শিক্ষক তার ছাত্রদের পরীক্ষা করবেন কিভাবে একজন মহিলাকে যৌনভাবে উত্তেজিত করতে হয়। শিক্ষক যখন বাড়িতে অনুশীলন না করার জন্য তিরস্কার করে ছাত্রদের আদেশ দিলেন, নিজেদের অজ্ঞতা কারনে, বিব্রত ছাত্ররা তার দৃষ্টি এবং তোতলামি উত্তর এড়ানোর চেষ্টা করল। তার স্ত্রীর সহায়তায় শিক্ষক যোনিতে লিঙ্গ অনুপ্রবেশের প্রমান যখন ছাত্রদের দেখাচ্ছেন তখন লুকাছাপা করে এক ছাত্র জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকলো, এবং শিক্ষক শ্লেষাত্মক স্বরে তাকে জিজ্ঞেস করলঃ “তুমি কি বলতে পারো বাইরের আঙ্গিনায় এমন কি আকর্ষণীয় বিষয় খুঁজে পেয়েছ?” এই ধরনের শিক্ষা নিঃসন্দেহে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে যৌন তৃপ্তির নিকুচি করবে।

পরিশেষে, মানুষ যেন একে অপরের সাথে বিনয়ী ও ভদ্র আচরণ করে তা নিশ্চিত করার জন্য এমন একটা নিয়ম বেঁধে দেব যেন প্রতিটি কথোপকথনের শুরু হয় অশ্লীলতার অপমানজনক আনুষ্ঠানিকতায়৷ কেন? ভদ্র কথোপকথনের মাঝখানে যখন আমরা সত্যিই রেগে যাই এবং হতাশাগুলোকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারি না তখন আমরা অনিয়ন্ত্রিত বাচনভঙ্গিতে বিস্ফোরিত হই যা আমাদের সাধারণ ধারণার বিপরীত নয় কি? কিন্তু আমাদের এই সাধারণ ধারণা এখানে ভুল৷ আমি আমার কিছু বন্ধু আছে যাদের সাথে এক ধরণের আনুষ্ঠানিকতা মেনে চলিঃ আমাদের একসাথে দেখা হলে ফর্মূলামাফিক আমরা পাঁচ মিনিটের জন্য রুক্ষ, আপত্তিকর ও বিস্বাদ ভাষায় এবংএকে অপরকে অপমান করে কথা বলতাম৷ তারপর ক্লান্ত হয়ে পরিচয় পর্বের এই বিরক্তিকর কিন্তু অনিবার্য আনুষ্ঠানিকতা পারষ্পরিক বোঝাপড়ায় আমরা স্বীকার করে নিতাম যেনবা নিজের কর্তব্য পূরণ শেষে এক মহা ত্রাণ পেয়েছি৷ এরপর আমরা শিথিল হয়ে স্বাভাবিক ভদ্র ভাবে কথা বলতে শুরু করতাম যেমনটি স্বাভাবিক ও সহানুভূতিশীল সাধারণ মানুষ করে থাকে; আমরাও তো স্বাভাবিক ও সহানুভূতিশীল সাধারণ মানুষের মতই৷ সকল জনগনের উপর এই ধরনের আনুষ্ঠানিকতা চাপিয়ে দিলে তা শান্তি ও পারস্পরিক সম্মানের নিশ্চয়তা প্রদান করবে৷

আপনার কাছে কি এইসব কিছু নিছক অসংযত কৌতুককর কিছু মনে হয়? তাহলে আরেকবার ভাবুনঃ আমরা কি যথারীতি অনুরূপ একটি পৃথিবীতে বাস করছি না

Leave a Reply

আপনি এখান থেকে কপি করতে পারবেন না!